পাঁচটি রহস্যময় লস্ট ওয়ার্ল্ড
রহস্যময় গ্রহ পৃথিবী , এই গ্রহে কত অদ্ভুত অদ্ভুত জায়গা এবং জীবের অস্তিত্ব রয়েছে তার খোঁজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই রহস্যময় গ্রহের কিছু জায়গা রয়েছে যার ধারে কাছে যাওয়া আজ পর্যন্ত মানুষের সম্ভব হয়নি। আর এসব জায়গাকেই হারানো পৃথিবী বলে। গুগল ম্যাপ এর কারনে হয়তো এর কয়েকটি খোঁজ পাওয়া গেছে, তবে সেখানে পৌছানো সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত। আজকে জানবো এমনই পাঁচটি হারানো পৃথিবী সম্পর্কে।
1) কেইভ হংসং ডুম্ড
পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গুহা এটি। মাত্র তিন দশক আগে 1991 সালে ওহান নামের এক ব্যক্তি এই গুহাটি আবিষ্কার করে। এখনো এই গুহাটির আশেপাশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কখনো এই গুহাটির মধ্যে ঢোকার সাহস করেনি। এর কারণ ছিল মাঝে মাঝে গুহার ভেতর থেকে চিকন এক ধরনের শব্দ আসতো। পরবর্তীতে যখন অনুসন্ধানকারীরা গুহাটির ভিতরে যখন প্রবেশ করে তখন তারা দেখতে পায় অপরূপ সুন্দর একটি মাটির নিচের নদী। এবং এই নদীর স্রোত থেকেই এমন চিকন শীষের শব্দ শোনা যায়। এখানে যখন প্রথম অনুসন্ধানকারীরা প্রবেশ করে তখন তারা গুহাটি দেখে অবাক হয়ে যায়, কারণ গুহাটির উপরের ছাদ ছিল 40 তলা বিল্ডিং এর সমান। প্রায় 10 মিলিয়ন বছর ধরে এই জায়গাটি এভাবেই পড়ে রয়েছে। যে কারণে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে এই গুহাটি পরিবেশ একদমই আলাদা। এখানে বিশাল বন রয়েছে, এই বনের গাছ গাছালি আপনি হাজার খুঁজলেও পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না।
2)মাউন্ট রোরাইমা
2)মাউন্ট রোরাইমা
মাউন্ট রোরাইমা |
পাহাড়টি আবিষ্কারের পর সাউথ আমেরিকার বিখ্যাত পাহাড় হয়ে যায়। ভেনিজুয়েলার সীমান্তবর্তী এলাকা তে রয়েছে এই পাহাড়টি। প্রায় 2810 মিটার উচ্চতা এই পাহাড়টির। এই পাহাড়টি দেখতে ঠিক একটুকরা কেকের মতো। এর অসাধারণ লালমাটি এবং গাঢ় সবুজ বন এই পাহাড় কে করেছে পৃথিবীর সর্ব রাজ্য গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই পাহাড়ের অনুসন্ধানকারীরা একটি অদ্ভুত প্রাণী খুঁজে পায়, এই প্রাণীর নাম দিয়েছিল ক্যাব্রেরাসোর্স। প্রাণীটির মাথা ঘোড়ার মত, শরীর সাপের মতন আবার বুকের দিকে মাছের মতো পাখনা রয়েছে। কিন্তু ইদানিং সময় অজানা কারণেই এই প্রাণীগুলো মৃত্যুবরণ করছে, আর এখানকার সবুজ বন গুলো হয়ে আসছে ধূসর।
3) দ্য কেইভ অফ মভেল
রোমানিয়ায় 1986 সালে এই জায়গাটি আবিষ্কৃত হয়। এই গুহাটির ঠিক কাছেই 1986 সালে একটি জিওলজিক্যাল সার্চ টিম ভৌগোলিক অনুসন্ধান চালায়, একটি পাওয়ার প্লান্ট বসানোর জন্য এই অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে সেই অনুসন্ধানকারীরা এই গুহাটি আবিষ্কার করে ফেলে। এই গুহাটি মাটি থেকে মাত্র 18 মিটার গভীরে অবস্থিত। গুহাটির বদ্ধ পরিবেশে ঢুকে আপনার মনে হবে আপনি যেন পৃথিবীতে নেই, অন্য কোনো গ্রহে চলে গেছেন। এই গুহাটির ভিতরের প্রাণী পরিবেশ পৃথিবীর কোন জায়গার সাথেই মিলেনা। কোটি বছর ধরে ঢাকা পড়ে থাকার কারণে এই গুহাটির পরিবেশ বাইরের পরিবেশ থেকে একদমই আলাদা হয়ে গেছে। এবং এই গুহায় এমন কিছু জীব পাওয়া গেছে যা হয়তো আপনি পৃথিবীর বুকে কখনোই দেখতে পাবেন না। এখানে প্রায় 46 প্রজাতির এরকম জীব আবিষ্কৃত হয়েছে। এই গুহার পরিবেশ প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগের মতোই রয়ে গেছে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন।
4) স্পাইন অফ স্কটিয়া
4) স্পাইন অফ স্কটিয়া
স্পাইন অফ স্কটিয়া |
স্পাইন অফ স্কোটিয়া পানির নিচে থাকা একটি লস্ট ওয়ার্ল্ড। গবেষকরা 2012 সালে এই জায়গাটির খোঁজ পায়। এই জায়গাটি দক্ষিণ ওসানিয়ায় অবস্থিত। আর এই জায়গাটির পানি প্রায় 2 হাজার 400 মিটার গভীর, এত গভীর পানি হওয়া সত্ত্বেও এই জায়গাটির তাপমাত্রা শুনে অবাক হয়ে যাওয়ার মত। বসন্তকালে এই জায়গার পানির নিচের তাপমাত্রা 382 ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমুদ্রের অতল গহব্বরে এই জায়গায় নানা জীবের বসবাস। আর এইসব জীব সম্পর্কে আজ পর্যন্ত বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি, হয়তো আর কোনদিন জানাও হবে না। জায়গাটি এতটাই রহস্যময় যে কারণে বিজ্ঞানীরা বলেই দিয়েছে এই জায়গাটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানা প্রায় অসম্ভব।
5) দ্য মেলভিল রেঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া
দ্য মেলভিল রেঞ্জ |
মাত্র কিছুকাল আগে অস্ট্রেলিয়ায় এই জায়গাটি আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে প্রায় হাজার মিটার উচ্চতার পাহাড় এবং ছোট ছোট গুল্ম গাছ দেখা যায় এই জায়গাটিতে। অনুসন্ধানকারীরা 2013 সালে এই অসাধারণ সুন্দর ট্রপিক্যাল ফরেস্টের খোঁজ পায়। কিন্তু এই জায়গাটি এতই দুর্গম যে শুধুমাত্র হেলিকপ্টার ছাড়া এখানে পৌঁছানো সম্ভব না। এই জায়গাটি অনুসন্ধান পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা প্রায় পাগল হয়ে যায় এর সৌন্দর্যে। এখানের ঘন সবুজ বন এবং বনের মাঝখান থেকে গড়িয়ে পড়া পাথর দেখতে অত্যাধিক সুন্দর। এখানে গবেষকরা অদ্ভুত ধরনের পোকামাকড় দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া এখানে গবেষকরা গেকো টিকটিকি নামের এক ধরনের টিকটিকি দেখা পেয়েছে। টিকটিকি টির লেজ দেখতে ঠিক পাতার মত।