ডিজেল ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
ডিজেল ইঞ্জিন একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন যা ডিজেল জ্বালানি ব্যবহার করে। এটি মূলত চারটি ধাপে কাজ করে: ইনটেক, কমপ্রেশন, পাওয়ার এবং এক্সহস্ট।
1. ইনটেক স্ট্রোক: পিস্টন ডাউনওয়ার্ড মুভ করে এবং সিলিন্ডারে বাতাস টানে।
2. কমপ্রেশন স্ট্রোক: পিস্টন আপওয়ার্ড মুভ করে এবং সিলিন্ডারে বাতাসকে সংকুচিত করে। সংকুচিত হওয়ার ফলে বাতাসের তাপমাত্রা প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পায়।
3. পাওয়ার স্ট্রোক: সংকুচিত গরম বাতাসের সাথে ডিজেল জ্বালানি স্প্রে করা হয়। জ্বালানি তাৎক্ষণিকভাবে জ্বলতে শুরু করে এবং বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ পিস্টনকে দ্রুত নিচে ঠেলে দেয়, যা ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টকে ঘুরিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।
4. এক্সহস্ট স্ট্রোক: পিস্টন আবার উপরে উঠে আসে এবং জ্বালানি পুড়ে যাওয়া গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বের করে দেয়।
ডিজেল ইঞ্জিন কিভাবে আবিষ্কার হয়?
ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছেন রুডলফ ডিজেল। ১৮৯২ সালে তিনি এই ইঞ্জিনের পেটেন্ট করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ইঞ্জিন তৈরি করা যা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমিয়ে কার্যকরভাবে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। তার ডিজাইন ছিল একটি হাই কমপ্রেশন ইঞ্জিন, যা তখনকার সময়ের প্রচলিত পেট্রোল ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক কার্যকরী ছিল। ১৮৯৭ সালে তিনি তার প্রথম কার্যকর ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি করেন।
ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধা
1. ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি: ডিজেল ইঞ্জিন সাধারণত পেট্রোল ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি জ্বালানি দক্ষ। উচ্চ কম্প্রেশন রেশিও এবং জ্বালানির ধীর পুড়ার কারণে ডিজেল ইঞ্জিন কম জ্বালানিতে বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
2. টর্ক ও পাওয়ার: ডিজেল ইঞ্জিন উচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। এর ফলে ভারী যানবাহন এবং মেশিনারিতে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহারের উপযোগী।
3. দীর্ঘস্থায়ীতা: ডিজেল ইঞ্জিন সাধারণত বেশিরভাগ পেট্রোল ইঞ্জিনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। কারণ ডিজেল ইঞ্জিনের গঠন সাধারণত বেশি স্থায়ী এবং শক্তিশালী উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়।
4. কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: ডিজেল ইঞ্জিনে সাধারণত স্পার্ক প্লাগ বা ইগনিশন সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না, যা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমিয়ে দেয়।
ডিজেল ইঞ্জিনের অসুবিধা
1. প্রাথমিক খরচ: ডিজেল ইঞ্জিনের প্রাথমিক খরচ সাধারণত পেট্রোল ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি। কারণ ডিজেল ইঞ্জিন তৈরিতে ব্যবহার করা উপকরণগুলো বেশি শক্তিশালী ও টেকসই হতে হয়।
2. নয়েজ ও ভাইব্রেশন: ডিজেল ইঞ্জিন সাধারণত বেশি শব্দ এবং কম্পন তৈরি করে। এটা কিছু ব্যবহারকারীর জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
3. এমিশনস: ডিজেল ইঞ্জিন সাধারণত নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) বেশি নির্গত করে, যা পরিবেশ দূষণের জন্য ক্ষতিকর।
4. ঠান্ডা আবহাওয়ায় সমস্যা: ঠান্ডা আবহাওয়ায় ডিজেল ইঞ্জিন চালু করা কঠিন হতে পারে। ডিজেল জ্বালানি কম তাপমাত্রায় সহজেই জমাট বাঁধে, যা ইঞ্জিন স্টার্টে সমস্যা সৃষ্টি করে।
সংক্ষেপণ
ডিজেল ইঞ্জিন একটি কার্যকরী এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন যা ভারী যানবাহন এবং শিল্প কারখানায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে, তবে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ডিজেল ইঞ্জিনের উন্নত প্রযুক্তি এবং কার্যকারিতা এখনও অনেক ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য করে রেখেছে।
টেকনোলজি বিষয়ক ও অন্যান্য তথ্য সমূহ পেতে আমার ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত থাকুন।